আমাদের মৌলিক চাহিদার মধ্যে বাসস্থান অন্যতম। গৃহকে বাসোপযোগী করার জন্য প্রয়োজন হয় আসবাবপত্র । আর গৃহকে মনোরম ও আকর্ষণীয় করে নান্দনিকতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন হয় গৃহের অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা। এই ক্ষেত্রে দামি আসবাবের প্রয়োজন নেই। নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী কমদামি জিনিস দিয়েও গৃহ সজ্জা করে রুচি ও শিল্পী মনের পরিচয় দেওয়া যায়। গৃহকে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ করে বসবাসের উপযোগী করে তোলার জন্য অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা একান্ত প্রয়োজন। পরিবার গৃহসজ্জার মাধ্যমে জীবনযাপনের মান উন্নত করে মানসিক তৃপ্তি লাভ করে। আর গৃহের সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যকে কেন্দ্র করেই সামাজিক উন্নতির বিকাশ ঘটে।
আসবাবপত্র বলতে টেবিল, চেয়ার, সোফাসেট, খাট, ওয়ারড্রোব, আলমিরা, বুকশেলফ ইত্যাদি ভারী অথচ বহনযোগ্য গৃহসজ্জা সামগ্রীকে বোঝায়। গৃহের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন সহজতর করার জন্য আসবাবের ভূমিকা অনেক। তা ছাড়া আরাম ও সৌন্দর্য বাড়াতেও এগুলোর জুড়ি নেই।
শহর কিংবা গ্রাম সর্বত্রই গৃহের বিভিন্ন কাজের জন্য আসবাবপত্র ব্যবহার করা হয়। পরিবারের জীবনযাত্রার মান, অবস্থানের স্থান অর্থাৎ শহর কিংবা গ্রাম, পারিবারিক জীবন চক্রের স্তর ইত্যাদির ভিন্নতায় আসবাবের চাহিদার ধরন বদলায় ।
গ্রামাঞ্চলের গৃহগুলো যেহেতু স্থায়ী আবাসস্থল এবং পর্যাপ্ত আয়তনবিশিষ্ট হয়ে থাকে তাই বড় আকৃতির ভারী কাঠের আসবাবের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলে ব্যবহৃত আসবাবপত্রসমূহের মধ্যে খাট, চৌকি, চেয়ার, টেবিল, টুল, বেঞ্চ, মিটসেফ, আলমিরা, আলনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। আম, জাম, কাঁঠাল, কড়ই ইত্যাদি গাছের কাঠ ব্যবহার করে কাঠমিস্ত্রি দিয়ে বাড়িতেই এই আসবাবগুলো নিজেদের চাহিদামতো বানিয়ে নেওয়া হয় ।
শহরাঞ্চলে অস্থায়ীভাবে বসবাসকারী কর্মজীবী মানুষের সংখ্যাই বেশি। অধিকাংশ লোকই ভাড়াবাড়িতে বসবাস করে। যারা নিজেদের বাড়িতে থাকেন তারাও আয়তনের সীমাবদ্ধতার জন্য নিজেদের চাহিদা মেটানোর উপযোগী হালকা ও যুগোপযোগী আসবাব ব্যবহার করে থাকেন। তা ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করতে যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য হালকা ও রুচিশীল আসবাব ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। শহরাঞ্চলে ব্যবহৃত আসবাবপত্রসমূহের মধ্যে খাট, বক্স খাট, নানা সাইজের টেবিল, লুকিং গ্লাসযুক্ত কাঠের আলমিরা, সোফাসেট, গদিওয়ালা চেয়ার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। শহরাঞ্চলে সীমিত আয়তনের নকশাদার, শৌখিন ও আধুনিক মডেলের আসবাব ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে আম, কাঁঠাল, কড়ই কাঠের পাশাপাশি সেগুন কাঠ, প্লাই উড, পারটেক্স ইত্যাদি কৃত্রিম কাঠের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। শহরাঞ্চলে রেডিমেড বা তৈরি আসবাব বেশি ব্যবহার করতে দেখা যায়।
বর্তমান গ্রাম ও শহর সর্বত্রই প্লাস্টিকের তৈরি আসবাব যেমন- চেয়ার, টেবিল, খাট, র্যাক ইত্যাদির বহুল ব্যবহার দেখা যায় ৷
আসবাব নির্বাচনের বিবেচ্য বিষয়গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো—
কাজ – তুমি তোমার পরিবারের জন্য আসবাব ক্রয় করার সময় কোন কোন বিষয় বিবেচনা করবে লেখ।
আসবাব নির্বাচনের পরবর্তী কাজ হলো সঠিকভাবে তা বিন্যাস করা। আসবাবপত্র বিন্যাস যে শুধু ঘর সাজানোর উদ্দেশ্যে করা হয়— তা নয়। সঠিকভাবে আসবাব বিন্যাসের মাধ্যমে গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জাকে আকর্ষণীয়, আরামদায়ক ও সুবিধাজনক করে রাখা হয়। এর ফলে পরিবারের সদস্যদের আরাম ও মানসিক তৃপ্তি বাড়ে।
গ্রাম কিংবা শহরে সর্বত্রই অভ্যন্তরীণ গৃহসজ্জায় আসবাব বিন্যাসের কতিপয় নিয়ম মেনে চলতে হয়। যথা:
প্রয়োজনীয় আসবাব বিন্যাস— আসবাব বিন্যাসের প্রথমেই মনে রাখা প্রয়োজন যে কোনো ঘরেই অতিরিক্ত আসবাব রাখতে নেই। বাসগৃহের জন্য আসবাবপত্র বিন্যাসের সময় প্রথমে দেখতে হবে কক্ষটি কী কাজে ব্যবহার হবে। কক্ষের ব্যবহার অনুযায়ী প্রয়োজনীয় আসবাব রাখতে হবে। যেমন :
শয়ন কক্ষ— খাট, ওয়ারড্রোব, আলনা, আলমারি ইত্যাদি।
বসার কক্ষ— সোফাসেট, বেতের চেয়ার, টেবিল, সোকেস, বুকসেলফ ইত্যাদি।
খাবার কক্ষ— ডাইনিং টেবিল, সোকেস, ফ্রিজ ইত্যাদি।
পড়ার কক্ষ— বুকসেলফ, টেবিল, চেয়ার, কম্পিউটার ইত্যাদি।
ক. সমানুপাত (Proportion)- আসবাব বিন্যাসে ঘরের আকৃতির সাথে আসবাবপত্রের আকার নির্ধারন করা দরকার। বড় ঘরে বড় আসবাব ও ছোট ঘরের জন্য ছোট আসবাব মানানসই। আবার যেখানে বড় ও ছোট আসবাবের সংমিশ্রণ প্রয়োজন সেখানে বড় আসবাবের সঙ্গে সমতা রক্ষা করে ছোট দুই-তিনটি আসবাব একত্রে সাজানো যায়। আসবাবপত্রের পরস্পরের আকৃতির অনুপাত ঠিক হলে সমগ্র গৃহসজ্জার আসবাব বিন্যাসে পারস্পরিক মিত্রতা বা মিল হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
খ. ভারসাম্য (Balance) - আসবাবপত্র বিন্যাসে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রয়োজন আছে। কক্ষের একদিকের সঙ্গে অন্য দিকের আসবাবপত্রের, মাঝখানের ও কর্নারের আসবাবপত্রের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। ঘরের একদিকে বেশি অন্য দিকে কম আসবাব সংস্থাপন করলে ভারসাম্য রক্ষা হয় না। একটি কক্ষের দুই দিকের আসবাবের গুরুত্ব সমান হলে তাকে প্রত্যক্ষ ভারসাম্য বলে। অন্যদিকে একপাশের জিনিসে বেশি গুরুত্ব থাকলে অর্থাৎ বেশি সাজানো থাকলে তাকে অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য বলে। অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য গৃহসজ্জায় নতুনত্ব ও আকর্ষণ সৃষ্টি করে।
গ. সামঞ্জস্য (Harmony) - সবার সাথে সবার মিত্রতাকেই সামঞ্জস্য বলে। ঘরে কেবল দামি আসবাব, চিত্রকর্ম, সো-পিস থাকলেই হবে না। সবকিছুর সাথে একটা সামঞ্জস্য থাকতে হবে।
ঘ. ছন্দ (Rhythm)- আসবাব বিন্যাসে ছন্দ বজায় রাখা দরকার, এতে দৃষ্টি কক্ষের একটা আসবাবে আবদ্ধ না থেকে সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিতে অন্য আসবাবে গিয়ে পৌঁছায়। কক্ষের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে দৃষ্টি উঠানামা করে। দৃষ্টির এই উঠানামাই ছন্দ । ছন্দের গতি আসবাব বিন্যাসে আকর্ষণ সৃষ্টি করে। একঘেয়েমি দূর করে এবং নতুনত্ব আনয়ন করে।
ঙ. প্রাধান্য (Emphasis)- আসবাব বিন্যাসের অন্যতম নীতি হলো প্রাধান্য। প্রাধান্য বলতে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুকে বোঝায়। বসার ঘরে সুদৃশ্য সেন্টার টেবিলে ফুলদানিতে তাজা ফুলের সমারোহ, খাবার ঘরে টেবিলে বিভিন্ন ফলের সমারোহ, শোবার ঘরে সুদৃশ্য আসবাব বা কার্পেট ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজিয়ে প্রাধান্য সৃষ্টি করা যায়।
কাজ : তুমি তোমার কক্ষে আসবাব বিন্যাসে কী কী বিষয় লক্ষ রাখবে লেখ।
শয়নকক্ষ (Bed Room ) -
সারা দিন কর্মব্যস্ততার পর মানুষ গৃহে ফিরে আসে। গৃহের শান্তিময় পরিবেশ আমাদের আরাম দেয়। তাই শয়নকক্ষে আসবাব বিন্যাসে যত্নবান হতে হবে।
লক্ষণীয় বিষয়—
বসার ঘর (Drawing Room)-
বসারকক্ষে পরিচিত লোকজন বা আত্মীয়স্বজন এসে বসে। সামাজিকতা রক্ষার কেন্দ্রস্থল হলো বসার ঘর। এই কক্ষের বিন্যাস বাড়ির লোকদের রুচিবোধ বাইরের লোকের কাছে প্রকাশ করে।
লক্ষণীয় বিষয়—
খাবার ঘর (Dining Room)-
খাবার ঘর পরিবারের সদস্যদের একত্র হওয়ার স্থল। বাড়ির সবাই একত্রে খেতে বসলে একটা আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
অতিথির ঘর (Guest Room)
অতিথির ঘর বসার ঘরের পাশে হলে ভালো হয়। এই কক্ষে খুব বেশি আসবাবপত্রের প্রয়োজন হয় না। খাট, ড্রেসিং টেবিল, দেয়াল আলমারি হলেই চলে।
লিভিং রুম (Living Room)
বর্তমান আধুনিক বাড়িতে খেলার ঘর ও লিভিং রুম থাকে। এই রুমে পরিবারের সদস্যরা অবসর সময় কাটায়। এই রুমে টেলিভিশন দেখা, বসা ও শোয়ার ব্যবস্থা থাকে। গিটার, হারমোনিয়াম ইত্যাদি বিনোদনের জিনিসপত্র থাকে ।
পড়ার ঘর (Reading Room)
পড়ার ঘর এমন জায়গায় হবে যেখানে কোনো শব্দ বা কথাবার্তা পড়াশোনার ব্যঘাত ঘটাতে না পারে। পড়ার রুমে টেবিল, চেয়ার, বুকসেলফ, কম্পিউটার ইত্যাদি থাকে।টেবিলে যাতে পর্যাপ্ত আলো পড়ে সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
রান্নাঘর (Kitchen )
রান্নাঘর খাবার ঘরের পাশে হয়ে থাকে। এতে খাদ্য পরিবেশন করতে সুবিধা হয়। চুলার স্থান জানালার পাশে হলে সহজেই ধোঁয়া বের হয়ে যায়। চুলা গ্যাস, কেরোসিন বা মাটির হতে পারে। শহর এলাকায় গ্যাস, গ্রামাঞ্চলে লাকড়ি বা কেরোসিনের চুলা দেখা যায়। আবার অনেকেই হিটারেও রান্না করে। রান্নাঘরে পানির কল এক কোনায় রাখলে ভালো হয়। বিভিন্ন জিনিসের কৌটা রাখার জন্য সেলফ ব্যবহার করতে হয়। দা-বঁটি, ছুরি ইত্যাদি ধারালো জিনিস শিশুদের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
রান্নাঘরের ওয়ালে সিলিং পর্যন্ত ক্যাবিনেট করে নিলে অনেক জিনিস রাখা যায়। তবে পোকামাকড় যাতে না জন্মায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
আসবাবপত্র নির্বাচন, বিন্যাসের পরই মানুষ চায় গৃহের মেঝে, দেওয়াল, পর্দা ও পুষ্প বিন্যাসের মাধ্যমে গৃহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে। সব কিছুর সামঞ্জস্য বিন্যাসই একটি গৃহকে অপরূপ করে তোলে। সুরুচির প্রকাশ ঘটায় ৷
মেঝের আচ্ছাদন— আমাদের দেশে ঘরের মেঝে সিমেন্টের বা সিমেন্টের সাথে রং মিশিয়ে মেঝে তৈরি করা হয়। গ্রামাঞ্চলে মাটির মেঝে থাকে। তবে আধুনিক বাড়িতে টাইলস বা মোজাইকের মেঝে দেখা যায়। শহরাঞ্চলে মেঝেতে কার্পেট ব্যবহার করা হয়। কার্পেট আসবাবের সাথে মানানসই হতে হবে। আমাদের দেশে ধুলা বেশি তাই ছোট আকারের কার্পেট ব্যবহার ভালো এতে যত্ন নিতে সহজ হয়।
দেয়াল সজ্জা— প্রতিটি গৃহেরই বিভিন্ন কক্ষে ছবি বা চিত্রকর্ম দেখা যায়। গৃহের অভ্যন্তরীণ সজ্জায় চিত্রকর্মের ভূমিকা অপরিসীম। খ্যাতনামা ব্যক্তির ছবি গৌরবের প্রতীক। মাতৃভূমির ছবি, প্রাকৃতিক দৃশ্য মনে প্রশান্তি আনে।
দেয়ালে ছবি টাঙানোর কিছু নিয়ম আছে। যেমন—
পর্দা— পর্দা হচ্ছে দরজা, জানালার আচ্ছাদন। দেয়ালের রং, মেঝের আচ্ছাদন ও অন্যান্য আসবাবের সাথে
সামঞ্জস্য রেখে পর্দা নির্বাচন করা উচিত।
পর্দার প্রয়োজনীয়তা-
আমাদের দেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ তাই হালকা রংয়ের পর্দাই আমাদের জন্য উপযুক্ত। এতে করে শীতলতার সৃষ্টি হয়। তবে শীতের দিনে গাঢ় রংয়ের পর্দা ব্যবহার করা যায়। পর্দার কাপড়টি এমন হতে হবে যাতে যত্ন নেওয়া সহজ হয়।
পুষ্পবিন্যাস—
পুষ্পবিন্যাস গৃহসজ্জার অন্যতম প্রধান অংশ। ফুল সাজানোর জন্য প্রয়োজন নানা ধরনের ফুলদানি বা পাত্র। এই পাত্রগুলো চীনামাটি, প্লাস্টিক, কাচ, বাঁশ, বিভিন্ন ধাতুর তৈরি হতে পারে। ফুলদানি বা পাত্র গোলাকার, চ্যাপ্টা, ডিম্বাকৃতি বা চারকোনা হতে পারে।
পুষ্পবিন্যাসের নিয়ম—
গৃহকে আসবাবপত্র দিয়ে সুসজ্জিত করলেই চলবে না গৃহের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার কথাও চিন্তা করতে হবে। নিজ গৃহকে সুসজ্জিত করে রাখলে সুরুচির পরিচয় পাওয়া যায়। তবে কেবল দামি, চমৎকার আসবাব দিয়ে ঘর সাজালেই চলবে না, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে। ময়লা, ধুলা পড়া আসবাব ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট করে। যত্নের অভাবে আসবাবের স্থায়িত্ব হ্রাস পায়, মাকড়সার জাল, পিঁপড়া, পোকার উপদ্রব হয় এবং রোগ-জীবাণু ছড়ায়।
তাই গৃহের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার জন্য প্রয়োজন—
গৃহের মেঝে ও আসবাব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা :
প্রতিদিন গৃহের মেঝে ও আসবাব পরিষ্কার করা আবশ্যক। গৃহের মধ্যে চলাফেরার ফলে মেঝে ময়লা হয় আসবাবের উপর ধুলাবালি জমে। এই ধুলা থেকে সর্দি, কাশি হয়। তাই প্রতিদিন ঘরের মেঝে, রান্নাঘর, গোসলখানার মেঝে ও আসবাবপত্র ধোয়া, মোছা করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে সপ্তাহে এক দিন জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। দরজা, জানালা, রান্নাঘরের দেয়াল, বেসিন, টয়লেটের প্যান/কমোড ইত্যাদি প্রতি সপ্তাহে পরিষ্কার করা উচিত।
মানুষ সৌন্দর্যের পূজারি। তাই গৃহের আরাম ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আসবাবপত্রের পাশাপাশি গৃহসজ্জায় নানা উপকরণ ব্যবহার করা যায়। তবে গৃহসজ্জায় শুধু যে বাজার থেকে মূল্যবান জিনিসই ব্যবহার করতে হয় তা নয়। বরং নিজস্ব সৃজনশীলতার মাধ্যমে গৃহের অব্যবহৃত জিনিস দিয়েও নানা ধরনের শিল্প সামগ্রী বানিয়ে ব্যবহার করা যায়। শিল্প সৃষ্টি মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এই শিল্প সৃষ্টি করতে যেয়ে সব সময় দামি জিনিসের প্রয়োজন হয় না। হাতের কাছে যা পাওয়া যায় বা ফেলে দেওয়া জিনিস দিয়েও শিল্প সৃষ্টি করে নিজের সৃজনশীলতা তুলে ধরা যায়
গৃহে বিভিন্ন অব্যবহৃত জিনিসের নাম :
পানি বা কোল্ডড্রিঙ্কস এর বোতল, ক্যান, টিসুবক্স, পুরনো ক্যালেন্ডার, পুরনো কাপড়, ডিমের খোসা, বিস্কুট, চকলেট বা চিপসের শক্ত কাগজের বক্স, কালি শেষ হয়ে যাওয়া বলপেন, ছোট হয়ে যাওয়া পেনসিল ইত্যাদি।
এখন আমরা অব্যবহৃত জিনিসের ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব :
ডিমের খোসা—
প্রতিদিন আমাদের খাদ্য তালিকায় ডিম থাকে। ডিমের খোসা আমরা ফেলে দিই। কিন্তু এই ফেলে দেওয়া খোসা দিয়েও আমরা শিল্প সৃষ্টি করতে পারি। যেমন :
ডিমটিকে একদিকে ছোট করে ছিদ্র করে ভেতরের অংশ বের করে নিয়ে আসতে হবে। তারপর রোদে ভেতরটা শুকাতে হবে। তারপর ডিমের খোসার গায়ে রং দিয়ে চমৎকার বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করে গৃহসজ্জায় ব্যবহার করা যায়।
আবার ডিমের খোসা ছোট ছোট টুকরা করে টুকরাগুলোকে আর্ট পেপারের উপর আঠা দিয়ে আটকিয়ে শুকিয়ে গেলে তার উপর রং দিয়ে এঁকে বিভিন্ন দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা যায় ৷
নমুনা-১ : পুতুলের আকৃতিতে হোল্ডার তৈরিকরণ
উপকরণ: ক্যালেন্ডারের পাতা, শক্ত কাগজ, ফেলে দেওয়া টুকরা কাপড়, উল, পাটের দড়ি, কালো টার্সেল, লেইস, গোল টিপ, ফিতা, আইকা/গাম। ক্যালেন্ডারের শক্ত কাগজ ব্যবহার করে নিম্নের চিত্র অনুযায়ী ফর্মা কেটে প্রথমে মূল কাঠামো তৈরি করে নিতে হবে। তারপর এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আঠা দিয়ে লেস লাগিয়ে, ফুল/পাটের দড়ি/টার্সেল দিয়ে বেণী তৈরি করে, গোল টিপ দিয়ে কিংবা রং দিয়ে চোখ, নাখ, ঠোঁট এঁকে নেওয়া যায়। শক্ত কাগজের পেছনের দিকে ফিতা/দড়ি লাগিয়ে ঝোলানোর জন্য হুকিং ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবে সম্পূর্ণ পুতুল তৈরি হয়ে গেলে টেলিফোন সেটের পার্শ্বে, ক্লিপ-কাঁটা রাখার জন্য কিংবা ম্যাসেজ হোল্ডার হিসেবে দেয়ালে ঝুলিয়ে ব্যবহার করা যায় ৷
নমুনা—২ : চটের তৈরি ওয়াল পকেট
ব্যবহৃত উপকরণ— চট, বর্ডারের জন্য রঙিন কাপড়, সেলাই করার জন্য সুঁই- সুতা। চট দিয়ে ওয়াল পকেট বানিয়ে হুকে ঝুলানোর ব্যবস্থা করে একদিকে গৃহসজ্জার উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা যায়, আবার প্রয়োজনীয় জিনিস হাতের কাছে রাখারও ব্যবস্থা করা যায় ৷